সালামুন আলাইকুম। আল্লাহর শিখানো সালামের পদ্ধতি। ৬ঃ৫৪।

আল্লাহ শিখিয়েছেন সালাম দিতে সালামুন আলাইকুম বলে। আপনি দিচ্ছেন আস-সালামু আলাইকুম বলে!


“সালামুন আলাইকুম”

আমাদের পারস্পরিক কথোপকথনের শুরুতে আল্লাহর শিখানো একটি চমৎকার অভিবাদন পদ্ধতি। 


আল্লাহ আমাদের জন্য বিধানে পরিপূর্ণ কিতাব, আল-কুরআন নাজিল করেছেন।
২৮ঃ৮৫, ৪৫ঃ১৮। 


তিনিই আমাদের একমাত্র বিধানদাতা। তিনি কুরআনে যে কোন বিধান এক বা একাধিক আয়াতে দিয়ে দিয়েছেন।  এ সম্পর্কে আল্লাহ বলছেন - 


১২ঃ৪০

“আল্লাহ ছাড়া কোন বিধান দাতা নেই (إِنِ ٱلْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ)।”


৭ঃ৫৪

“সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিকও তিনি”।



আবার আমাদের আমল বা ইবাদাত পদ্ধতিও আল্লাহই বিস্তারিত বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি বিধানের বাস্তবায়ন কিভাবে হবে, সেই ইবাদত পদ্ধতি বা আমলের পদ্ধতি বিধানযুক্ত আয়াতে বা ভিন্ন এক বা একাধিক আয়াতে তিনি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। 


২২ঃ৬৭

“আমি প্রত্যেক জাতির জন্য ইবাদাতের নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, তারা যার অনুসরণ করে/করবে।”


২৪ঃ৪১

“প্রত্যেকেই জানে তার ‘ইবাদতের ও পবিত্রতা-মহিমা’ ঘোষণার পদ্ধতি।”



বিধানের ক্ষেত্রে যেমন অন্যকে মানার কোনো সুযোগ নেই, ইবাদাত বা আমলের ক্ষেত্রেও অন্যের তরিকা / পথ / মত / পদ্ধতি গ্রহণের কোনো সুযোগ আল্লাহ আমাদেরকে দেন নি। 


আসুন জেনে নিই আল্লাহর কিতাব থেকে সালাম এবং এর জবাবের বিস্তারিত। 


সালাম বা অভিবাদন কি? 


“সালামুন আলাইকুম” বলে সালাম দেয়া বা অভিবাদন করা আল্লাহর একটি বিধান - ৬ঃ৫৪।


৬ঃ৫৪

আমার আয়াতে বিশ্বাসী লোকেরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তাদেরকে বল, “সালামুন আলাইকুম (سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ)” অর্থাৎ ‘‘তোমাদের প্রতি সালাম’’।


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই আয়াতের পাশাপাশি আরো আয়াতে সালামের বিধান দিয়েছেন। এবং একই সাথে তিনি আমলও দেখিয়ে দিয়েছেন। এই ৬ঃ৫৪ নং আয়াতেই তিনি সালামের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন - “তোমাদের রাব্ব নিজের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করার নীতি বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন।”


১৬ঃ৩২

মালাইকারা যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র অবস্থায় এই ব’লে যে, ‘ সালামুন আলাইকুম (سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা যে ‘আমাল করতে তার ফল হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ কর।’

(এখানে মালাইকাদের বলা সালামের উদাহরণ দেখিয়ে দিয়েছেন।)


১৩ঃ২৬

মালাইকারা জান্নাতের প্রতিটি দরজা দিয়ে উপস্থিত হয়ে জান্নাতিদের উদ্দেশ্যে বলবে -
‘‘সালামুন আলাইকুম (سَلَـٰمٌ عَلَيْكُمْ) অর্থাৎ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না উত্তম পরকালের এই ঘর!’’

(এখানেও মালাইকাদের থেকে আমাদেরকে উদাহরণ বা উপমা দিয়ে আল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন।)


সালামের জবাব কিভাবে দেবো?


৪ঃ৮৬

যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা (কমপক্ষে) সেইটাই অনুরূপ ফিরিয়ে দাও (رُدُّوهَآ), নিশ্চয়ই আল্লাহ (ক্ষুদ্র-বৃহৎ) সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।


এই ৪ঃ৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সালামের জবাব শিক্ষা দিয়ে বা জবাবের আমল শিক্ষা দিয়ে আমাদের আমলের হিসাবের ব্যাপারে বলছেন - “নিশ্চয়ই আল্লাহ (ক্ষুদ্র-বৃহৎ) সকল বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।”


এই আয়াতে আল্লাহ জানালেন - 

কেউ যদি “সালামুন আলাইকুম” বলে, উত্তরে “সালামুন আলাইকুম” বলতে হবে বা তার চেয়ে উত্তম বলতে হবে। 


“সালামুন আলাইকুম” এর উত্তম জবাব কি?


৩৯ঃ৭৩

 “...সালামুন আলাইকুম তিবতুম…। অর্থাৎ …তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও…।”



সালামের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ কি বলছেন?


২৪ঃ৬১

  • আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম দিতে হবে যা “মুবারাকাতান ত্বয়্যিবাহ অর্থাৎ বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদন।” 


সুতরাং সালাম দেয়া যায়ঃ 

সালামুন আলাইকুম। বা,

সালামুন আলাইকুম তিবতুম। বা,

সালামুন আলাইকুম তিবতুম মুবারাকাতান তয়্যিবাহ। 


একইভাবে আল্লাহর শিখানো পদ্ধতিতে জবাবা হলো- 

সালামুন আলাইকুম। বা,

সালামুন আলাইকুম তিবতুম। বা,

সালামুন আলাইকুম তিবতুম মুবারাকাতান তয়্যিবাহ। 



কেউ যদি সালাম দিতে গিয়ে আয়াত বিকৃত করে ফেলে, তার কি হবে?


আপনি কিন্তু কুল হুয়াল্লাহু আল-আহাদ বলেন না। কারণ, সরাসরি আয়াত বিকৃত হয়। 

তাহলে সালামুন আলাইকুম এর আগে “আল-” লাগিয়ে আস-সালামু আলাইকুম বলার এখতিয়ার কি আপনার আছে? 


আল্লাহর যে কোন কথা বা অর্ডার বা আয়াত বিকৃতকারীদের আল্লাহ বলছেন জালিম এবং সীমা লংঘনকারী। ৭ঃ১৬২। 


তাহলে বুঝুন,

যেই সালাম দিলে রহমত আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত হওয়ার কথা ছিলো, সেই সালাম আয়াতের বিকৃতভাবে দিয়ে জালিম ও সীমালংঘনকারী হিসেবে আল্লাহর দরবারে লিপিবদ্ধ হচ্ছেন না?



আল্লাহ আয়াতে পরিষ্কার শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সালাম দিতে হয় বা অভিবাদন জানাতে হয়। 

কিন্তু আল্লাহ যেভাবে অভিবাদন জানাননি সেভাবে কি সালামুন আলা মুহম্মদ বা অন্য কাউকে অভিবাদন জানানো যায়?


 ৫৮ঃ৮

“...তারা যখন তোমার নিকট আসে তখন তারা তোমাকে এমন কথা দ্বারা অভিবাদন করে যদ্বারা আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেননি।…”

 


সালাম সম্পর্কে কয়েকটি তথ্যঃ 


অনর্থক কথাবার্তায় যারা লিপ্ত সেই অজ্ঞদের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য সালামুন আলাইকুম বলে বিদায় নিতে হয়।  ২৮ঃ৫৫।


যারা মুমিন নয় তাদেরকেও  সালাম দেয়া যায় বা তাদের সালামের জবাব দেয়া যায়।  ৪ঃ৯৪।


নিজ গৃহ ব্যাতিত অন্যদের ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিতে হবে।  ২৪ঃ২৭।



সালামুন আলা মুহম্মদ কিভাবে সালাম দিয়েছেন?


কিছু লোক রাসুল সাঃ এর কাছে এলো।

তারা রাসুল সাঃ কে অনুরোধ করলো এই কুরআন বাদে অন্য কুরআন বা কিতাব থেকে তাদেরকে বিধান ও আমল দিতে। 

রাসুল সাঃ পারবেন না জানালেন। 


তাহলে কুরআনের বিধান ও আমল কিছুটা পরিবর্তন করে দিন অর্থাৎ কুরআনের আয়াতের কিছুটা পরিবর্তন করে দিন। তারা রাসুল সাঃ কে অনুরোধ করলো।


এইবারও রাসুল সাঃ পারবেন না জানালেন। 

বরং রাসুল সাঃ বললেন তিনি শুধুমাত্র, কেবলমাত্র, একমাত্র কুরআনের ওহীর বিধিবিধান ও আমল অনুসরণ করেন। 


রাসুল সাঃ তাদেরকে জানালেন - 

এই কুরআন ছাড়া অন্য কুরআন বা কিতাবের বিধিবিধান দিলে বা কুরআনের বিধিবিধানে সামান্য পরিবর্তনও যদি করেন তাহলে আল্লাহর সাথে নাফরমানি হবে এবং বিচারের দিন আল্লাহ শাস্তি দিবেন। 


রাসুল সাঃ কুরআনের কোনো বিধান পরিবর্তন করেন নি। এটা কুরআনেই আল্লাহ জানালেন। 


দেখুন সূরা ইউনুস ১০:১৫


স্পষ্টতই রাসূল সালামুন আলাইহি কুরআনের আয়াতের বিকৃত করে আমল করেন নি। 


তাহলে রাসুলের নামে আল্লাহর আয়াতের বিকৃতি ঘটিয়ে যারা সালাম দিয়ে যাচ্ছেন 

- তারা নতুন করে কুরআন নিয়ে ভাববার সময় এখনো আসে নি?





Category : কুরআন ও হাদিস,

User Image

Writer - মাসুদ হাসান

Blog - Al-Quran

About us - আল কুরআনের আয়াত যারা মেনে চলেন, তারাই মুসলিম। আল-কুরআন নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  Like 0 likes - 0 comments - 167 views